মিথ্যা মামলা হলে আপনার করনীয়?

False Case

মিথ্যা মামলা হলে আপনার করনীয়? What should you do if the case is false?

মিথ্যা মামলা । ব্যাপার টা কেমন । কাউকে বিশ্বাস করাতেও পারছেন না । আপনি মিথ্যা মামলায় ফেঁসে গেছেন । কখনো কখনো জীবনটা একেবারে ছারখার করে দেয় এই মিথ্যা মামলা । শুধু ভুক্ত ভুগিরাই বুঝতে পারেন । যাই হোক আজকে আমি আলোচনা করব এই মিথ্যা মামলা এবং মিথ্যা মামলা হলে কি করবেন? এর বিস্তারিত সব কিছু নিয়ে ।

আইনের মূল উদ্দেশ্য যেখানে নাগরিক দের রক্ষা করা সেখানে এই আইনকে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যাবহার করে অনেক সময় ভাল মানুষ দের কে হয়রানি করা হয় । কোন অপরাধ না করেও এই মিথ্যা মামলায় আপনাকে ফাঁসাতে পারে । 

আপনার অজান্তে একদিন পুলিশ এসে আপনাকে ধরে নিয়ে গেল । আপনি জানতে চাইলেন, আপনার অপরাধ কি? পুলিশ উত্তর দিল আপনার নামে মামলা আছে । থানায় চলেন সব জানতে পারবেন । এই ভাবে আরও কত কি। যাই  হোক আজ এই লেখায় তুলে ধরতে চেস্তা করব মিথ্যা মামলায় আপনার কি কি করনীয় এবং মিথ্যা মামলা থেকে কি ভাবে বাঁচবেন ।

মিথ্যা মামলা হলে আপনার করনীয়? What should you do if the case is false?

মিথ্যা মামলা কি? What is a false case?

বর্তমানে বাংলাদেশে মিথ্যা মামলা একটি উদ্বেগজনক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ।দেশের বিচার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে  রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যক্তিগত বিরোধসহ বিভিন্ন মহলে মিথ্যা মামলার ঘটনা বিরাজ করছে। 

মিথ্যা মামলা শুধুমাত্র ক্ষতিগ্রস্তদের অধিকার লঙ্ঘন করে না বরং নিরপরাধ ব্যক্তিদের আইনি বিপদে ফেলে, যা তাদের কারাবাস বা দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের দিকে পরিচালিত করে।

মিথ্যা মামলা হল যে মামলা অসত্য বা মিথ্যা বলে প্রামানিত হয়। এটি অনেক ধরণের হতে পারে, যেমন কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা । কোনও কাজের মিথ্যা বর্ণনা বা কোনও সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মিথ্যা দাবি করে থানায় বা কোর্টে এজাহার দায়ের করা ।

মিথ্যা মামলা দায়ের করার কারণে একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হতে পারে এবং এটি আইনগতভাবে দণ্ডনীয় একটি অপরাধ। এক্ষেত্রে ন্যায্য কারণ এবং সঠিক তথ্য প্রমাণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

অনেক সময় মিথ্যা মামলা বা দাবি করা আইনগতভাবে প্রমাণ করা বেশ কঠিন হতে পারে, কারণ এর প্রমাণ সাধারণত সাক্ষ্য দ্বারা হয়। সেক্ষেত্রে ন্যায্য প্রমাণ না থাকলে মিথ্যা মামলা অনেক সময় প্রমানিত হয় না ।

আদালতের প্রধান কাজ হচ্ছে অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা । এবং বিচারের মাধ্যমে শাস্তির বিধান করা । সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। 

আইনের মাধ্যমে একজন  ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি তার ন্যায্য বিচার পাবে এটাই কাম্য । কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় প্রতিপক্ষকে নানা ভাবে  হেয় প্রতিপন্ন করতে বা হয়রানি করতে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়।

আজকাল প্রায়ই মিথ্যা মামলায় খবর শুনতে পাওয়া যায় । মিথ্যা সাক্ষী/বাদী সাজিয়ে মামলা করার ফলে প্রতিপক্ষ নানা ভাবে হয়রানির শিকার হয়ে থাকে । 

আবার এই মিথ্যা মামলা চালাতে গিয়ে অনেকে  আর্থিক ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হন।আজকে এই মিথ্যা মামলা হলে আপনার কি করনীয় বিস্তারিত চেষ্টা করব এ সম্পর্কে আইন কী বলে এবং এর সমাধান কি হতে পারে ।

মিথ্যা মামলা কি ভাবে হয়ে থাকে? How are false cases?

 আইনের প্রধান উদ্দেশ্য হল প্রতিটি নাগরিকের অধিকার রক্ষা করা । অথচ এই আইনকে ভুল ভাবে  ব্যবহার করে অনেক সময় নিরীহ মানুষদের হয়রানিও করা হয়। পূর্ব কোন শত্রুতার জেরে  অনেক সময় এই মিথ্যা মামলা করা হয়ে থাকে ।

প্রায়ই দেখা যায়  একে অপরকে ঘায়েল বা হয়রানি করার জন্য অথবা পূর্ব কোন শত্রুতার জেরে বা, জায়গাজমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে সায়েস্তা করতে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। 

আবার অনেক সময় প্রভাবশালী কোনো ব্যাক্তি বা দল কাউকে শায়েস্তা করার জন্যও মিথ্যা মামলা বা অভিযোগ করে থাকে। এই সব মিথ্যা মামলার মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে নানা রকম হয়রানির মাধ্যমে শিক্ষা দিয়ে থাকে । এতে করে প্রতিপক্ষ সামাজিক, মানুষিক এবং অর্থ নৈতিক ভাবে খতিগ্রস্থ এর শিকার হয়ে থাকে ।

মিথ্যা মামলা দেওয়ানি বা ফৌজদারি হয়ে থাকে । তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মিথ্যা মামলা ফৌজদারি হয়ে থাকে । মূল উদ্দেশ্যই হলো মানুষকে ভোগান্তি দেওয়া। 

আপনি যতই নির্দোষ থাকেন না  কেন, কেউ আপনি যদি কোন মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে থাকেন তাহলে শুরুতে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশী । 

মিথ্যা মামলা হলে করনীয় কি? What to do if the case is false

মিথ্যা মামলা হলে করনীয় কি? What to do if the case is false?

মিথ্যা মামলা হলে মানুষ যে ভুল সবচেয়ে বেশি করে থাকে, তা হলো ভয় পেয়ে পালিয়ে থাকা। এ রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে মানসিকভাবে যতটা সম্ভব শান্ত থাকুন।ভয় পেলে আপনি আরও ঝামেলায় জড়িয়ে যেতে পারেন । 

মনকে শক্ত করুন আর খুঁজে বের করুন মিথ্যা মামলা কেন হল? কে দিল ? কোথায় এবং এর কারন? বিস্তারিত । ভয় পাবার কিছু নেই । কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হলে আইন এর অনেক পদ্ধতি আছে । 

একটা কথা মনে রাখতে হবে, আপনার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত আইনের চোখে  আপনি নিরপরাধ। এখন প্রশ্ন হলো, কীভাবে মিথ্যা মামলার অভিযোগ থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে ? 

মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে হলে আমাদের যা যা করনীয় তার বিস্তারিত নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়েছে  । 

মিথ্যা মামলা হলে নিম্নলিখিত করনীয় রয়েছে: Following are the steps to be taken in case of false case:

১। আইনগত সমাধান খোঁজ করুন: প্রথমেই  মিথ্যা মামলা সম্পর্কে আইনগত সমাধান খোঁজা উচিত। একজন বিজ্ঞ আইনজীবী বা কোন আইনগত পেশাদার থেকে সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

২। একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করুন: যদি আপনি নিজে কোন কারনে উপস্থিত হতে না পারেন তবে, আপনার কেস/মামলার জন্য কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। তারা আপনাকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন । আপনার মামলার সমাধানে সাহায্য করতে পারেন।

৩। আইনগত সমস্যার জন্য প্রয়োজনীয় পেপার সংরক্ষণ করুন: মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রে কোন আইনগত সমস্যার সমাধানের জন্য ওনেক ধরনের পেপার লাগতে পারে । আপনাকে কোন আইনগত পেপার জমা দেওয়া লাগতে পারে ।

৪। সঠিক তথ্য দিন: মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রে আপনাকে আপনার সম্পর্কে সঠিক ও সত্য তথ্য দিতে হবে। মিথ্যা মামলা নিয়ে আপনার মন্তব্য ও সাক্ষ্যগুলি সঠিক হতে হবে।তা না হলে আরও ঝামেলায় জড়িয়ে যেতে পারেন ।

৫। প্রকৃত এবং নির্ভুল সাক্ষ্য দিন: মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রে প্রকৃত এবং নির্ভুল সাক্ষ্য দেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। মিথ্যা মামলার বিষয়ে যখন কোন প্রকার বিবাদ হয়, তখন আপনার কাছে আপনার দায়িত্ব থাকে নিজের পক্ষ ও সমস্ত সত্য তথ্য দিয়ে তাকে স্পষ্ট করে দেওয়া। আপনি মামলাটি শেষ করতে চাইলে বিরোধ করার চেষ্টা হতে বিরত থাকুন।

৬। পুলিশকে সঠিক তথ্য দিন: মিথ্যা মামলা হলে আপনি পুলিশ কে সঠিক  তথ্য দিতে পারেন। আপনি স্থানীয় পুলিশ অফিসারকে জানাতে পারেন এবং প্রয়োজনে একটি মিথ্যা মামলার রিপোর্ট ফাইল করতে পারেন।

৭। নিজেকে নির্দোষ প্রমান করুন: মিথ্যা মামলা হলে আপনার উচিত নিজেকে নির্দোষ প্রমান করা । আপনাকে নির্দিষ্ট করতে হবে যে আপনি কোন প্রকার নিয়ম ভঙ্গ করেন নাই।

আপনি চুরি না করেও যদি চুরির জন্য মামলার শিকার হন, তবে একবার ভাবুন তো ব্যাপার তা কেমন লাগবে । 

৮। বিষয়টি সঠিকভাবে বোঝান: মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রে বিষয়টি সঠিকভাবে বোঝানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে বিষয়টি যত সহজ ভাষায় বোঝাতে হবে এবং মিথ্যা মামলা নিয়ে নিজের মতামত স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে। এছাড়াও, মিথ্যা মামলার সংক্ষেপে একটি সংক্ষিপ্ত লেখা লিখে দেওয়া উচিত।

৯। নিষ্ঠা খুব গুরুত্বপূর্ণঃ মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রে নিষ্ঠা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য। আপনি সঠিক উদ্দেশ্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে সহযোগিতা করতে পারেন । প্রয়োজনে মুখোমুখি হয়ে সত্যকে স্বীকার করতে প্রস্তুত হতে হবে। একটি নিষ্ঠাবান কর্মকর্তার সাথে সহযোগিতা করলে আপনার মামলার নির্ভরযোগ্য ভাবে সমাধান হয়ে যাবে ।আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন যে আপনি একজন নিষ্ঠাবান ব্যক্তি।

১০। সতর্কতাঃ মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রে সতর্কতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনার একটি ভুল তথ্য মিথ্যা মামলার পাশাপাশি চলতে থাকতে পারে। সতর্ক থাকুন এবং আপনার কাজের প্রতি সত্যতা এবং নিষ্ঠা বজায় রাখুন।সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার আগে আপনি আপনার পক্ষে সমস্ত সত্য তথ্য সাবধানে জমা দিয়ে নিশ্চিত হতে পারেন ।

মামলার এজাহারের কপি সংগ্রহ করাঃ Collecting copy of statement of case:

মিথ্যা মামলা সাধারণত দুই ধরনের জায়গায় হতে পারে ।

ক) স্থানীয় থানায়ঃ  

খ) কোর্টে 

কোন স্থানীয় থানায় যদি আপনার বিরুদ্ধে মামলা হয়ে থাকে, তাহলে প্রথমেই এজাহারের একটি কপি সংগ্রহ করুন।আপনি যদি থানার এজাহারের কপি তুলতে না পারেন তাহলে আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করতে পারেন । 

একজন বীজ্ঞ আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় যা যা দরকার যেনে নিতে পারেন ।  জেলা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে পারেন। আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সঠিক তথ্য দেবার জন্য নোটিশ জারি করতে পারেন । 

থানার তদন্ত কারী কর্মকর্তা আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগটির সত্যতা না পেলে, আপনাকে নির্দোষ দেখিয়ে ফাইনাল রিপোর্ট আদালতে দাখিল করবেন।ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল হলে আপনি মামলা থেকে মুক্তি পেতে পারেন ।

চার্জশিট বা অভিযোগপত্র দিলে কি করনীয়? What to do when given a charge sheet or complaint?

অনেক সময় দেখা যায় আদালতে চার্জশিট বা অভিযোগপত্র দাখিল হয়ে গেছে । আপনাকে জেলা আদালতে জামিন চাইতে হবে। জেলা আদালত জামিন না মঞ্জুর করলে,পর্যায়ক্রমে উচ্চ আদালতে আবেদন করতে হবে।

আপনি মামলা থেকে অব্যাহতি/রেহাইর  জন্য আবেদন করতে পারেন। অব্যাহতির আবেদন নাকচ হলে উচ্চ আদালতে প্রতিকার চাইতে পারেন।এ ব্যাপারে আইনে অনেক সুযোগ আছে । বিস্তারিত আপনার আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করতে পারেন ।

থানার মামলা হলে জামিনের জন্য আবেদন করাঃ  Applying for bail in case of police case:

আপনি কিছু জানার আগেই হঠাৎ পুলিশ এসে আপনাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যেতে পারে । এই সময়ে ভয় পাবেন না । সাহস রাখুন , স্থির থাকুন আর গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চেষ্টা করুন । যদি সমাধান করতে পারেন নিয়ম অনুযায়ী দেখতে পারেন ।  

একটা কথা মনে রাখবেন নিয়ম মাফিক গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনাকে আদালতে প্রেরণ করা হবে। আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করে জামিনের জন্য আদালতে আবেদন করতে হবে।

আদালতে মামলা হলে আত্মসমর্পণ করাঃ Surrender in case of court case:

থানায় মামলা না হয়ে আদালতে (সি,আর মামলা) হতে পারে, এক্ষেত্রে আদালত সমন দিতে পারেন কিংবা গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করতে পারেন। এর জন্য একজন বীজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে হবে। 

আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করে হাইকোর্ট বিভাগে আগাম জামিনের জন্য জামিন চাইতে পারেন । হাইকোর্ট মনে করলে আগাম জামিন দিতে পারে । এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে আপনি কোন ক্ষেত্রে জামিন চাইলেন তার উপর ।

মিথ্যা মামলায় শাস্তি হলে করনীয়ঃ If punished in a false case, to be done:

 

মিথ্যা মামলায় শাস্তি হলে করনীয়ঃ If punished in a false case, to be done:

আইনে এমন একটা যায়গা যেখানে নির্দোষ কোন লোক হয়রানি হলে তার জন্যও আইন রয়েছে ।  দণ্ডবিধির ২১১ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা মামলা করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আপনি নির্দোষ প্রমাণিত হলে মিথ্যা মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিকার চেয়ে মামলা করতে পারেন। 

দণ্ড বিধির ২১১ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা ফৌজদারি মামলা করেন, তবে দুই বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। 

যদি এমন গুরুতর মিথ্যা ফৌজদারি মামলা করা হয়, যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সাত বছর বা তার ঊর্ধ্বে কারাদণ্ড হতে পারে, সে ক্ষেত্রে মিথ্যা মামলাকারী বা বাদীপক্ষ সাত বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

নারী নির্যাতন মিথ্যা মামলা থেকে বাচার উপায় .Women abuse is a way to avoid false cases

বাংলাদেশে নারীদের কে শারীরিক এবং নানা রকম যৌন হয়রানি এবং নির্যাতন থেকে রক্ষা করার  জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন আইন প্রণয়ন করা হয় । এই  আইন টি সাধারণত নারীদের সুরক্ষার জন্য করা হয়েছে । 

বর্তমানে এই আইনটির অপব্যবহার করে অনেকেই মিথ্যা মামলা দায়ের করে থাকেন । কেউ মিথ্যা মামলা দায়ের করে কাউকে হয়রানি করলে সে প্রতিকার পেতে পারে । নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৭ (১) ধারা অনুযায়ী মিথ্যা মামলার প্রতিকার পাওয়া যায় ।

আপনি যদি নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে থাকেন । তাহলে প্রতিকারেরে জন্য হয়রানির কথা তুলে ধরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে আবেদন করে এর প্রতিকার চাইতে পারেন।

আদালত ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২০০ ধারা অনুযায়ী সমস্ত কিছু পর্যবেক্ষণ করে বাদীর বক্তব্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিপক্ষকে সমন জারি করতে পারে। 

মামলার নিয়ম অনুযায়ী যে ভুক্তভোগী তাকেই মামলা করতে হবে।ভুক্তভোগী বা ক্ষতিগ্রস্তের দায়ের করা মামলা প্রমানীত হলে বাদীর (যে মিথ্যা মামলা করছে) তার সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। 

Read Also

অনলাইনে মামলা দেখার নিয়ম . থানার মামলা দেখার উপায়

নারী নির্যাতনের মিথ্যা মামলা করার শাস্তিঃPunishment for filing a false case of violence against women:

আপনার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মিথ্যা মামলা হলে আপনি অবশ্যই এর প্রতিকার পেতে পারেন । নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের অধীন ভুয়া ও মিথ্যা মামলায় কাউকে সামাজিকভাবে  হেয় প্রতিপন্ন করা যায়। 

নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের এই  মিথ্যা মামলার ভুক্তভোগী হলে আইনের মাধ্যমেই আদালতে লিখিত আবেদন দায়ের করে এর যথাযথকরার মধ্য দিয়ে প্রতিকার পেতে পারেন। 

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ১৭ ধারায় উল্লেখ আছে মিথ্যা মামলার বা অভিযোগ করার দায়ে অভিযোগ কারীর সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এর বিধান রয়েছে।

মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দানের নির্দেশঃOrder to give compensation to the person affected in the case:

মিথ্যা মামলা যারা করে এমন সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধির নির্দেশনা রয়েছে ।  ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫০ ধারা অনুসারে মিথ্যা মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে আদালত ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ দিতে পারেন। 

এ ছাড়া কোনো পুলিশ কর্মকর্তা আমলযোগ্য নয় এ রকম কোনো মামলায় মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়ে থাকলে তাঁর বিরুদ্ধেও এই ধারা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ দেওয়ার বিধান রেখেছেন ।

মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দানের নির্দেশঃ

উপসংহার 

মিথ্যা মামলা আমাদের দেশে একটি গুরুতর সমস্যা । এর জন্য সরকার ও বিচার বিভাগের জরুরী মনোযোগ প্রয়োজন।এই সমস্যাটি শুধু আইনের শাসনকেই নষ্ট করে না, দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। 

আমাদের উচিত এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং মিথ্যা মামলা দায়ের রোধে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায়বিচার প্রদানে কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য একসঙ্গে কাজ করা ।

আইনে প্রকৃত অপরাধীদের উপযুক্ত বিচার প্রয়োগ হোক। কোনো নিরপরাধ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয় এটা নিশ্চিত করা সরকার ও সমাজের একান্ত দায়িত্ব । সর্বোপরি ক্ষতিগ্রস্তদের সময়মতো ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগকেও আরও শক্তিশালী করতে হবে।

Read Also

আইন কাকে বলে? আইনের সংজ্ঞা ও আইনের বিস্তারিত আলোচনা ?

মুনতাসির মাহমুদ জজ কোর্ট আইনজীবী

প্রশ্নঃ নারী নির্যাতন মিথ্যা মামলা থেকে বাচার উপায় কি ?

উঃ- একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করতে পারেন ।  

প্রশ্নঃ কারো নামে মামলা আছে কিনা জানার উপায়?

উঃ স্থানীয় থানায় বা আদালতে খুঁজে দেখতে হবে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *