নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা । নিম পাতার ব্যবহার 

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং নিম পাতার ব্যাবহার নিয়ে আজকে আমাদের লেখা । 

বিডি নিউজ ওয়াল বরাবরের মত সবচেয়ে ভাল ইনফরমেশন নিয়ে লিখে থাকে।আজকেও তার থেকে আলাদা নয় । আমরা আজকে নিম পাতার বিস্তারিত নিয়ে আলোচনা করব । 

আশা করি আমাদের সাথে থাকবেন । নিম পাতা সম্পর্কে ভাল কিছু তথ্য তুলে ধরব যা এর আগে কখনো কেউ তুলে ধরেনি । 

নিম , (Azadirachta indica), যাকে নিম বা মারগোসাও বলা হয়, মেহগনি পরিবারের দ্রুত বর্ধনশীল একটি গাছ (Meliaceae)। 

নিম গাছ একটি ঔষধি হিসেবে মূল্যবান একটি গাছ । এই গাছের পাতা থেকে শুরু করে এর ছাল বা বাকল পর্যন্ত কোন কিছুই ফেলনা নয় ।

নিম একটি গাছ। নিম গাছের ছাল, নিম গাছের পাতা এবং বীজ ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এই গাছের পাতা, মূল, ফুল এবং ফল নানা রকম কাজে ব্যবহার করা হয়।

What is Neem Tree
What is Neem Tree

 নিম গাছ কি ? What is Neem Tree?

নিম গাছ হল একটি ঔষধি গাছ। নিম একটি বহুবর্ষজীবী ও চিরহরিৎ বৃক্ষ।যার গুনাগুন বলে শেষ করা যাবে না। নিম গাছের ফুল, পাতা ,বাকল ,জড় সবই কাজে লাগে। নিম গাছের গুনাগুনের কথা বিবেচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিম গাছকে “একুশ শতকের বৃক্ষ” বলে ঘোষণা করেছে ।

  • নিম গাছের প্রচলিত নাম: নিম/তিতা /ঘোড়া নিম।
  • নিম গাছের ইংরেজি নাম:  Indian Lilac
  • নিম গাছের ইউনানী নাম: আজাদরখতে হিন্দি।
  • নিম গাছের আয়ুর্বেদিক নাম: নিম্ব।
  • নিম গাছের বৈজ্ঞানিক নাম: Azadireachta indica A.jum .
  •  নিম গাছের পরিবার: Meliaceae .
  • নিম গাছের ব্যবহার্য অংশ: সম্পূর্ণ গাছ।
  • নিম গাছের অবস্থাঃ শুকনো/কাঁচা ।
  • নিম গাছের স্বাদঃ খুবই তিতা ।

নিম গাছের আকার-আকৃতি: 

নিম গাছ সারা বছর পাওয়া যায় একে চিরহরিৎ  গাছ ও বলা  হয়ে থাকে । নিম গাছ সাধারণত চল্লিশ  থেকে পঞ্চাশ  ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। নিম গাছের কান্ডের ব্যাস সাধারণত বিশ থেকে ত্রিশ ইঞ্চি  পর্যন্ত হতে পারে। 

ডালের চারদিকে দশ থেকে বার ইঞ্চি যৌগিক পত্র জন্মে। পাতা আংশিক বাঁকানো থাকে এবং পাতার কিনারায় ১০ থেকে ১৫ টি করে খাজ যুক্ত অংশ থাকে। পাতা সাধারণত  ২.৫ থেকে ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত  লম্বা হয়। 

নিম গাছ এর বয়স ১০ বছর হলেই এর পরিপক্বতা চলে আসে । 

নিম গাছ কোথায় দেখতে পাওয়া যায়: 

ভারত ও বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই প্রায় দেখা যায়। তবে নিম গাছ সাধারণত উষ্ণ আবহাওয়া প্রধান অঞ্চলে ভালো হয়। বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলে নিম গাছ বেশি জন্মে।

নিম গাছের মূল রাসায়নিক উপাদান: 

স্যাপোনিন, ভনয়েড,এলকালয়েডস,আজাডিরেকটিন,নিম্বিডিন, এসকরবিক এসিড, এমাইনো এসিড, প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি 

নিম গাছের কার্যকারিতা:

নিম গাছ হল পারিবারিক ফার্মেসী। মাথার খুশকি নিরাময়ে নিমের রয়েছে আশ্চর্য গুনগুন ক্ষমতায়। চুলকানি খোঁজ পাচরা ,দাদ ,এক জিমা ,ব্রণ ,বসন্তের দাগ দূর করতে নিমগাছ ও নিম পাতার ব্যবহার ব্যাপক। 

চুল পাকা, চুল পড়া ও চুলের ভঙ্গুরতা প্রতিরোধে নিম গাছ ও নিম পাতা অতুলনীয়।  দাঁত নড়বড়ে হলে নিম্নের দাতুল বা মেসওয়াক ব্যবহার করা যায়। নিম গাছ ব্যাকটেরিয়া ও ফাংগাল ইনফেকশন নিরাময় করে ।

নিম একটি ঔষধি গাছ
নিম একটি ঔষধি গাছ

নিম পাতার বৈশিষ্ট্য 

নিম গাছকে অলৌকিক বৃক্ষ বলে থাকে । নিম একটি ঔষধি গাছ যার ডাল, পাতা, রস সবই মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বহুবিধ কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। 

নিম একটি বহুবর্ষজীবী ও চিরহরিৎ বৃক্ষ । নিম গাছ আকৃতিতে ৪০-৫০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এর কাণ্ডের ব্যাস ২০-৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। 

নিম গাছের ডালের সব পাশে দশ থেকে বার ইঞ্চি পরিমান যৌগিক পত্র জন্মে থাকে । এর পাতা আংশিক বাকানো থাকে । নিম পাতার কিনারায়  দশ থেকে পনের টি টি করে খাঁজ খাঁজ এর মত  অংশ থাকে। 

নিম গাছের পাতার আকার তিন থেকে চার ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে । নিম গাছের ফল কিছুটা আঙুর ফলের মতো দেখতে হয়ে থাকে । নিম ফলের ফলের একটি মাত্র  বীজ থাকে। 

জুন থেকে জুলাই মাসে এই  ফল পেকে থাকে । এর ফল গুলো সাধারণত তেতো স্বাদ যুক্ত হয়ে থাকে । তবে পাকার পর এর কালার হলুদ হয় এবং পরে এর স্বাদ মিষ্টি হয়। ভারত এবং বাংলাদেশে সহ বিশ্বের নানা দেশে নিম গাছ জন্মে থাকে । 

প্রাপ্ত বয়স্ক হতে সময় লাগে ১০ বছর। নিম গাছ সাধারণত উষ্ণ আবহাওয়া প্রধান অঞ্চলে ভালো হয়। মাটির পিএইচ ৬.২-৮.৫ এবং বৃষ্টিপাত ১৮-৪৬ ইঞ্চি ও ১২০ ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রা নিম গাছের জন্য উপযোগী।

নিম পাতার বিস্তৃতি

নিম চিরহরিৎ গাছ নামে পরিচিত । এই নিম গাছ ও নিম পাতা পৃথিবীর সবচেয়ে উপকারি ঔষধি উদ্ভিদের সুনাম অর্জন করেছে। 

নিম গাছ আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ব্যাপক ভাবে ব্যাবহার হয়ে থাকে ।গাছটি বাংলাদেশ ও ভারত সহ বিশ্বের নানা দেশে জন্মে থাকে । 

বর্তমানে সারা পৃথিবীতে এই গাছের চাষ করা হচ্ছে । মানুষ নিম গাছের উপকারিতা পাচ্ছে বিধায় এই গাছ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চলছে ।

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম পাতার উপকারিতা। ও অপকারিতা এবং নিম পাতার ব্যবহার

নিম পাতার উপকারিতা যেমন আছে  তেমনি নিম পাতার কিছু অপকারিতাও রয়েছে । নিম মানব দেহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্ভিদ। 

নিম গাছের পাতা থেকে শুরু করে বাকল (ছাল), শিকড়, ফুল এবং ফল সব কিছুই মানুষের উপকারে লাগে ।

নিম গাছের পাতা কুষ্ঠ রোগ থেকে শুরু করে  পেটের ব্যথা, ত্বকের নানা রকম রোগ, হালকা জ্বর,  চোখের নানা রোগ, ডায়াবেটিস, দাঁতের নানা রকম রোগ,হৃদপিণ্ড এবং যকৃতের নানা রকম রোগ বালাই সমাধানে নিম ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। 

নিম হল এমন একটি উদ্ভিদ যা সমস্ত রোগ বা জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে বা রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। 

এছাড়াও বহুকাল ধরে শরীরের সৌন্দর্য বজায় রাখার জন্য নিম ব্যবহার হয়ে আসছে। নিম গাছ এবং নিম পাতা শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি উদ্ভিদ তা আমরা সকলেই জানি। 

এবার আসুন আসল কথায় দেখে নেই নিম পাতার প্রধান উপকারিতা ও অপকারিতা গুলি কি কি এবং এর বিস্তারিত এক নজরে দেখে নেয়া যাকঃ 

নিম পাতার উপকারিতা
নিম পাতার উপকারিতা

নিম পাতার উপকারিতা

নিম ও নিম পাতা রক্ত পরিষ্কার করেঃ

নিম পাতা মানব দেহের রক্ত পরিষ্কার করতে উপকারী ভূমিকা পালন করে থাকে । নিম পাতার রস  নিয়মিত সেবন করলে রক্তে শর্করার মাত্রা অনেকাংশে কমে আসে ।

নিম পাতার রস হৃদপিন্ডের গতি স্বাভাবিক রাখতে ভাল কাজ করে থাকে । নিমপাতার রস শরীরের রক্তচলাচল ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নিম পাতার উপকারিতাঃ 

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নিম পাতার ভূমিকা অপরিসীম। নিম পাতায় উপস্থিত উপাদান গুলি শরীরকে ভিতর থেকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে থাকে ।রক্ত বিশুদ্ধ করতে  নিম পাতা 

বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক ও বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত নিমপাতা খাওয়া উচিত। 

খুশকি রোধে নিম পাতাঃ 

নিম ও নিম পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ছত্রাক  এবং ব্যাকটেরিয়া নাশক উপাদান। এই উপাদান গুলি খুশকির চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

নিম পাতার পেস্ট তৈরি করে যদি মাথার তালুর উপর ভাল করে লাগানো হয়, তাহলে খুশকি, উকুন এবং চুলকানির মত সমস্যা থেকে সহজে পরিত্রান পাওয়া যায়। খুসকির জন্য নিমপাতার উপকারিতা বেশ ভাল ।

নিম পাতা দাত ও মাড়ির সমস্যা সমাধানেঃ 

নিম পাতা দাঁত এবং মাড়ির যে কোন সমস্যা সমাধানে ঔষধ হিসেবে  ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রধানত স্টেপটোকক্কাস মিউট্যান্সের ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধির ফলে মুখগহ্বরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। 

এই ধরনের ব্যাকটেরিয়া থেকে নিরাময় পেতে নিম ও নিম পাতা খুবই উপকারী একটি উপাদান। এর পাশাপাশি নিমের তেল বিভিন্ন টুথপেস্ট এবং ফেসওয়াশে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

নিম পাতায় উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে Anti-microbial Antibodies উপাদান। মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে নিম একটি ভাল উপাদান হিসেবে কাজ করে থাকে । 

নিম পাতায় উপস্থিত এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান মারি এবং দাঁতের টিস্যু গুলির মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে থাকে ।

নিম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে কাজ করে থাকেঃ

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিম খুবই ভাল কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে সুগার বা ডায়াবেটিস এর মত রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। 

নিম পাতা রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভাল কাজ করে থাকে ।একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে, নিমে উপস্থিতি রয়েছে প্রচুর পরিমাণে হাইপোগ্লাইসেমিক উপাদান, যা শরীরের মধ্যে উপস্থিত যেকোনো রোগ ও জীবাণুকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে।

নিম অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে কাজ করেঃ

নিম পাতা হাঁপানি এবং অ্যাজমার মতো জটিল রোগ থেকে নিরাময় করতে সাহায্য করে থাকে । নিমের বীজ থেকে তেল উৎপন্ন হয় এবং এই তেল হাঁপানি চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে থাকে। 

প্রতিনিয়ত যদি নিয়ম করে কয়েক ফোটা নিমের তেল সেবন করা হয়। তাহলে অ্যাজমা অথবা হাঁপানির মতো কষ্টদায়ক রোগের থেকে নিরাময় পাওয়া যায়। 

নিম হাঁপানি ও  অ্যাজমার চিকিৎসায় বহু যুগ থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে।

আলসার চিকিৎসায় নিমের উপকারিতাঃ 

নিম পাতা ও নিম আলসার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে ।নিম ও নিম পাতায় আলসারের মত রোগ থেকে ভাল হওয়া যায় । 

প্রতি দিন সকাল বেলায় খালি পেটে নিম গুঁড়ো করে পরিমাণ মতো জলের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়, তাহলে আলসারের মত সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়া যায়। 

যাদের গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা আছে তারা নিম পাতা ব্যবহারে ভাল উপকার পেতে পারেন ।

ক্যান্সার প্রতিরোধে নিম ও নিম পাতাঃ 

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে নিম খুবই উপকারী একটি উপাদান। নিম পাতায় উপস্থিত রয়েছে স্যাকারাইডস এবং লিওমনোয়েডস নামক উপাদান, যা মানব শরীরে ক্যান্সার উৎপন্নকারী কোষগুলিকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। 

গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা  নিম পাতা বা নিম পাতার নির্যাস সেবন করে তাদের মধ্যে ক্যান্সার হবার ঝুকি অনেক কম। 

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, নিম পাতার নির্যাস প্রস্টেট ক্যান্সারের কোষ গুলোকে ধ্বংস করতে সক্ষম। তাই প্রতিনিয়ত নিয়ম করে নিম পাতা বা নিম পাতার নির্যাস সেবন করা প্রয়োজন।

কুষ্ঠ রোগে নিম পাতার উপকারিতাঃ

এক সময় ছিল যখন কুষ্ঠ রোগের নানা কুসংস্কার সমাজে দেখা যেত । সেই সময়ে এর তেমন কোন চিকিৎসা ছিল না । নিম গাছের ফল থেকে তৈরি হয় এক ধরনের তেল । নিম তেল কুষ্ঠ রোগের মেডিসিন হিসেবে ভাল কাজ করে থাকে । 

নিম গাছের যে কোন কিছু ব্যাবহারের পূর্বে ভাল ভাবে জেনে শূনে ব্যাবহার করা উত্তম । কারন নিমের যেমন উপকারিতা আছে তেমনি এর ব্যাবহার না জানলে অপকারিতা হতে পারে ।

ম্যালেরিয়া রোগ প্রতিরোধে নিমঃ

ম্যালেরিয়া রোগের এক অন্যতম ঔষধ হল নিম। এই রোগ প্রধানত স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা ছড়ায়। ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং শরীর দুর্বল হয়ে পরে। 

নিম ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু বহনকারী ব্যাকটেরিয়া গুলিকে মেরে ফেলতে সক্ষম । নিমে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ম্যালেরিয়া উপাদান, যা ম্যালেরিয়া রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসায় নিম এর ব্যাবহারে ভাল উপকার পাওয়া যায় ।নিম পাতা ম্যালেরিয়া রোগের এক প্রধান ঔষধ হিসেবেও জানা যায়।

লিভারের স্বাস্থ্যরক্ষায় নিমের উপকারিতাঃ 

নিম গাছের ফুল লিভারের স্বাস্থ্যরক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লিভারে জন্ডিস এর মত সমস্যা থেকে সমাধান দিতে নিম খুবই কার্যকরী। 

নিম গাছের ফুলে কার্সিনোজেনেসিস নামক উপাদান রয়েছে , এই উপাদান লিভারের জন্য ভাল  উপকারী করে থাকে । 

নিম ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন । না জেনে কোন কিছু করতে গেলে উপকারের চেয়ে অপকার হতে পারে ।

অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল হিসেবে নিম পাতার উপকারিতাঃ

নিম পাতায় আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি- ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, এই উপাদান মানব শরীরের নানা রকম রোগ জীবাণুকে ধ্বংস করতে ভাল ভূমিকা পালন করে থাকে। 

নিম গাছের পাতায় এই অ্যান্টি- ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ছাড়াও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ভাইরাল উপাদান। 

নিম পাতার উপাদান গুলি ব্যাকটেরিয়া কে নির্মূল করতে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে থাকে । 

নিম গাছের ডালে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান। এই অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান মানবদেহে উৎপন্ন হওয়া যেকোনো ধরনের জীবাণু এবং ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে। 

নিম পাতার স্ট্রেপ্টোকোকাস মিটানস নামক উপাদান দাঁতের জন্য ভাল কাজ করে থাকে । দাঁতের নানা রকম রোগের জন্য নিম একটি উৎকৃষ্ট উপাদান হিসেবে কাজ করে থাকে ।

কৃমি বিনাশে নিম পাতার উপকারিতাঃ

নিম পাতা কৃমি বিনাশ করতে ভাল ভূমিকা পালন করে থাকে । অনেক সময় শিশুদের পেটে কৃমির অস্তিত্ব দেখা যায় এতে করে, কৃমি আক্রান্ত শিশুদের চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। 

এই কৃমি বিনাশ করতে নিম গাছের মূলের ছাল শুকিয়ে গুড়ো করে নিয়ম করে খাওয়ান হয় তাহলে কৃমির বিনাশ করা যায় ।তবে এসব ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত ।

পেটের নানা রকম সমস্যা সমাধানে নিম পাতার উপকারিতা লিখে শেষ করা যাবে না । যুগ যুগ ধরে এই নিম পাতার উপকারিতা মানুষ পেয়ে আসছে ।

ত্বকের যত্নে নিম পাতার উপকারিতাঃ

রূপচর্চায় নিম পাতার ব্যবহার অনেক আগের কাল হয়ে আসছে। মানব দেহে নানা রকম কারণে পিম্পলস, ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস এবং ব্রণের মতো সমস্যা দেখা যায়। 

নিম পাতার ব্যাবহারে এই সব দূর হয়ে থাকে ।ত্বকের নানা রকম যত্ন নিতে নিম পাতার উপকারিতা অপরিসীম ।  

নিম পাতার বিশেষ ঔষধি গুনাগুন এবংনিম পাতায় উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, যা ত্বকে প্রয়োজনীয় আদ্রতা প্রদান করতে সাহায্য করে। 

ত্বকে নানা রকম ব্যাক্টেরিয়া বা ফাঙ্গাল জনিত বিভিন্ন সমস্যার কারণে অনেকেই নিম পাতা দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক ব্যবহার করে থাকেন। 

নিম পাতার উপকারিতা পেতে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নিতে নিম পাতা সিদ্ধ করে সেই জল ত্বকে লাগাতে পারেন।

Neem Pata
Neem Pata

নিম পাতার অপকারিতা

নিম, একটি ব্যাপকভাবে স্বীকৃত উদ্ভিদ, উপকারী এবং প্রতিকূল উভয় গুণের অধিকারী। যদিও নিম বিভিন্ন উপকারি সুবিধা দেয়, তবে সম্ভাব্য অপকারিতাও স্বীকার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

নিম বা এর অতিরিক্ত ব্যবহার মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। নিমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা বুঝতে পারা ব্যবহারের আগে অপরিহার্য হয়ে ওঠে। 

নিম্নের এই লেখার লক্ষ্য নিম সেবনের সাথে সম্পর্কিত বিরূপ প্রভাব এবং সতর্কতাগুলি অন্বেষণ করা।

  • 01)  শিশুদের উপর ক্ষতিকর প্রভাব: 

নিম তেলের অত্যধিক ব্যবহার বা খাওয়া শিশুদের স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। বমি বমি ভাব, দুর্বলতা এবং স্নায়বিক ব্যাধি সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে । এমনকি মৃত্যু ঘটতে পারে।

  • 02) গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অনুপযুক্ত: 

নিম পাতাগুলি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য নিরোধক কারণ তারা গর্ভপাতের সম্ভাব্য কারণ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে৷ 

তাই গর্ভবতী মহিলাদের নিম পাতা ব্যবহার থেকে কঠোরভাবে বিরত থাকতে হবে।

  • ০৩) অটোইমিউন ডিসঅর্ডারগুলির উপর বিরূপ প্রভাব: 

অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের তাদের ইমিউনোস্টিমুলেটরি বৈশিষ্ট্যের কারণে নিম পাতার ব্যবহার এড়ানো উচিত। 

নিম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে অত্যধিকভাবে সক্রিয় করতে পারে, যা বিদ্যমান স্বাস্থ্যের ঝুকির অবস্থাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

  • ০৪) নিম্ন রক্তচাপের সাথে অসামঞ্জস্যতা: 

নিম পাতা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, যা নিম্ন রক্তচাপযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য অনুপযুক্ত করে তোলে। 

তাই, এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

  • ০৫) উর্বরতার উপর প্রভাব: 

নিম বন্ধ্যাত্বের সম্ভাবনার সাথে যুক্ত। ফলস্বরূপ, যারা গর্ভধারণের পরিকল্পনা করছেন তাদের নিম খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

  • ০৬) অস্ত্রোপচারের আগে সতর্কতা: 

ঝুঁকি কমাতে, যেকোনো অস্ত্রোপচারের অন্তত দুই সপ্তাহ আগে নিমের ব্যবহার বন্ধ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

নিম পাতা ব্যাবহারের নিয়ম
নিম পাতা ব্যাবহারের নিয়ম

নিম পাতা ব্যাবহারের নিয়মঃ 

নিম পাতার প্রস্তাবিত ডোজ: 

নিম পাতার প্রস্তাবিত ডোজ মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন দুটি পাতার বেশি খাওয়া নিরাপদ বলে মনে করা হয়। 

অত্যধিক গ্রহণের ফলে সম্ভাব্য সুবিধার চেয়ে বেশি বিরূপ প্রভাব হতে পারে।

প্রতিকূল প্রতিক্রিয়ায় নিম অবিলম্বে বন্ধ করা: 

নিম পাতা খাওয়ার পর যদি ব্যক্তিরা বমি, ডায়রিয়া বা মাথাব্যথার মতো উপসর্গগুলি অনুভব করেন, তাহলে অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত।

নিম পাতা দীর্ঘায়িত সেবনের জন্য বিশেষজ্ঞের নির্দেশনা: 

ব্যক্তিগত প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে ক্রমাগত নিম পাতা খাওয়ার উপযুক্ত সময়কাল নির্ধারণ করতে একজন বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা অপরিহার্য। হঠাৎ অত্যধিক গ্রহণ শরীরের উপর বিরূপ প্রভাব হতে পারে।

নিম ও নিম পাতা সেবনের জন্য সতর্কতা: 

খালি পেটে নিম পাতার দীর্ঘায়িত সেবন এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি উপকারের পরিবর্তে ক্ষতিকারক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

উপসংহার: 

নিম, আমাদের দেশের একটি প্রাচীন এবং বিখ্যাত গাছ, অনেক উপকারী গুণের অধিকারী। যাইহোক, নিম ব্যবহার করার সময় সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা গুরুত্বপূর্ণ। 

এই নিবন্ধটি নিমের সাথে সম্পর্কিত প্রতিকূল প্রভাবগুলির একটি বিস্তৃত ওভারভিউ প্রদান করেছে, মানব স্বাস্থ্যের জন্য যে কোনও ঝুঁকি কমাতে দায়িত্বশীল ব্যবহারের গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছে।

Read Also 

ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার । হাড় এবং পেশীর জন্য ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার।

  • বিডি নিউজ ওয়াল ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে আমাদের সাথে থাকুন এবং যেকোনো প্রশ্ন করুতেঃ এখানে ক্লিক করুন
  • বিডি নিউজ ওয়াল ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
  • বিডি নিউজ ওয়াল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
  • গুগল নিউজে বিডি নিউজ ওয়াল সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
  • বিডি নিউজ ওয়াল সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে
  • বিডি নিউজ ওয়াল এর সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন এই সাইট।

A B Siddique Shohel

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *